
বর্তমানে নারী স্বাধীনতা নিয়ে এত লেখালেখি হচ্ছে যে আমরা মুসলমানরা সব সময় কোনঠাসা হয়ে থাকি, কে কখন আমাদেরকে আবার কি বলে ফেলে। অবস্থা এমন হচ্ছে যে মুসলমানদের মাঝে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোনো নারী ছিল না, সকল প্রভাবশালী সামাজিক নারী ব্যক্তিত্বই পশ্চিমাদের মাঝ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে, মুসলমান নারীরা সারা জীবনই কাচুমাচু হয়ে সমাজে বসবাস করেছে । তৃতীয় বার কারাগারে যাওয়ার আগে আমি উম্মুল মুমিনদের কে নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছি। উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়া বিনতে হুয়াই রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়েই গাভিজিৎ রায়ের সাথে আমার ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল।
জেল থেকে বের হবার পর এখন পর্যন্ত কোন উম্মুল মুমেনীনকে নিয়ে তেমন কিছু লেখা হয়নি।
আমার বইয়ের প্রকাশক মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক খানের অনুরোধে উম্মুল মুমেনীন উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহাকে নিয়ে এই লেখাটা লিখলাম।
হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় হযরত উম্মু সালামা আল্লাহর রাসূলকে একটি সঠিক পরামর্শ দিয়েছিলেন, সহিহ আল বুখারীতে আছে হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি সাক্ষরের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ১ টি বিষয় নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ছিলেন। তা হল যেহেতু সাহাবীরা এই বছর হজ করতে পারে নি তাই উনারা খুবই বিমর্ষ ছিলেন। সকল সাহাবীই নিজ নিজ স্থানে বসে ছিলেন। সন্ধি চুক্তির পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেন লোকেরা যেন হুদাইবিয়ায় নিজ নিজ পশু কোরবানি করে, সেহেতু সন্ধির শর্তাবলী দৃশ্যত মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী ছিল, এ কারণে সাধারণভাবে মুসলমানরা মনঃক্ষুন্ন ও বিমর্ষ ছিল , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ৩ বার নির্দেশ দানের পরেও কারো মধ্যে নির্দেশ পালনের জন্য কোন তোড়জোর দেখা গেল না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম তাবুতে ফিরে এসে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করেন তখন উম্মু সালামা বলেন আপনি কাউকে কিছু বলবেন না, বাইরে গিয়ে নিজে কোরবানি করুন অতঃপর ইহরাম ভাঙার জন্য মাথার চুল ফেলে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাঁর পরামর্শ মত কাজ করেন।
সাহাবীরা যখন দেখলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজেই কুরবানি করছেন, উনার মাথা মুন্ডন করেছেন তখন সবাই নিজ নিজ পশু কোরবানি করা ও ইহরাম ভাঙ্গার জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয়।
হযরত উম্মু সালামার গণমানুষের প্রকৃতি অনুধাবনে কত গভীর জ্ঞান যে ছিল তা এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়। আল্লাহর রাসূল কে দেয়া হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর পরামর্শ ছিল খুবই সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত, যা এক কঠিন সমস্যাকে নিমিষেই সমাধান করে দেয়। হযরত উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার এই পরামর্শ মনস্তত্ত্বের এক বড় কঠিন সমস্যার সমাধান করে দেয়।
হিজরী নবম সনের ঈলা ও তাখঈর এর ঘটনার সময় হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ নিজ মেয়েকে উপদেশ দেন , সেই সময় হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উম্মে সালামার কাছে এসে কথা বলেন ,তখন হযরত উম্মু সালামা একটু কর্কশ কন্ঠে হযরত উমর কে বলেন
ইবনে খাত্তাব ! এ আশ্চর্যের ব্যাপার যে আপনি প্রত্যেকটি ব্যাপারেই নাক গলান, এমনকি আপনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও তার বিবিগনের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারেও নাক গলাতে শুরু করেছেন। এমনি তেজস্বী নারী ছিলেন হযরত উম্মু সালামা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর স্ত্রী গনের মাঝে দুইটি দল ছিল। এক দলে ছিলেন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা, হযরত হাফসা রাযিয়াল্লাহু আনহা, হযরত সাফিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা ও হযরত সাওদা রাযিয়াল্লাহু আনহা। আর অন্য দলে ছিলেন হযরত উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা ও অন্যরা।
হযরত উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা প্রত্যুৎপন্নমিতার অধিকারী ছিলেন, একদিন তিনি চুলের বেনী বাধঁছিলেন, এমন সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবা দানের জন্য মসজিদের মিম্বরে উঠলেন। তিনি কেবল ‘ওহে জনমণ্ডলী বলেছেন’ আর অমনি উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা চুল বিন্যস্ত কারিনীকে বললেন, ‘চুল বেঁধে দাও’।
সে বলল এত তাড়া কিসের ? সবে তো তিনি ‘ওহে জনমণ্ডলী বলেছেন’ হযরত উম্মু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহা তাকে থামিয়ে বললেন- খুব ভালো কথা, আমরা কি জনমণ্ডলীর অন্তর্ভুক্ত নই ? তারপর তিনি নিজের চুল বেঁধে দ্রুত উঠে যান এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবীজির পূর্ণ ভাষণটি শুনেন। এ ঘটনা দ্বারা উনার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তার একটি প্রমাণ পাওয়া যায়” [মুসনাদে আহমদ ৬/৬৯]
হযরত আবু হুরাইরা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন রমজান মাসে কারো রাতের বেলায় ফরজ গোসল করতে হলে সুবহে সাদিকের পূর্বেই তা করতে হবে অন্যথায় তার রোজা ভেঙে যাবে, এক ব্যক্তি হযরত আয়েশা ও হযরত উম্মু সালামার কাছে আবু হুরায়রার এই ফতুয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তখন তারা দুজনই এই ফতুয়ার প্রতিবাদ করে বলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম খোদ সুবহে সাদেক পর্যন্ত অপবিত্র অবস্থায় দেখা গেছে, নবীজি ওনার ফরজ গোসল সুবহে সাদিকের পরে করেছেন, এরপর আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু উনার এই ফতোয়া ফিরিয়ে নিলেন।