
দীর্ঘদিন কারাগার থেকে মুক্তি পাবার পর ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের দুই তারিখে প্রকাশক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান এর অনুরোধে ফারাবী রচনা সমগ্র বইটার ভূমিকা লেখা শুরু করলাম। যদিও এই ভূমিকা লিখতে আমার একদম ইচ্ছা করছিল না। কারণ গতকাল ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যাবেলা আমার দেশের বাড়িতে পুলিশ গিয়েছিলো। আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার মা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের সময়ে বহুবার পুলিশি ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছেন। ঠিক এই সময়, শেখ হাসিনার পতনের পরেও হালনাগাদ তথ্য নেবার উসীলায় পুলিশ আবার আমার পরিবারকে হয়রানী করছে। ২০১৫ সালে অভিজিৎ হত্যার দুইদিন পরেই আমি র্যাব কর্তৃক গুম হই। এরপর ২০১৫ সালের মার্চ মাসের ২ তারিখ থেকে ২০২৫ সালের ২২ আগষ্ট -এই দীর্ঘ ১০ বছর ৫ মাস আমি দেশের বিভিন্ন কারাগারে থেকেছি। আমাকে মোট ৫টি মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। এর মাঝে ২ টি সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ও বাকী ৩ টি তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায়। রিমান্ডের পর রিমান্ডে নেয়া হয় আমাকে। তবে যেই সব লেখালেখির কারণে আমি দীর্ঘ কারাবাস যাপন করেছি, আজ সেই সব লেখার একটি অংশ এখন বই আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। জীবনে এটাই সান্ত্বনা।
আমি যেই সময় লেখালেখি করেছি সেই সময় আর এই সময়ের প্রেক্ষাপট পুরোটাই ভিন্ন। এখন আপনি সারা দিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা চলতে পারেন, লেখালেখি করতে পারেন। আপনাকে কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আমাদের সময়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে, লিখতে গেলে মানুষের হাত কাঁপত। কারণ বলা নেই কওয়া নেই, যে কোনো সময় দানব পুলিশ, RAB, DB, CTTC, ATU আপনাকে গুম করে ফেলবে। ভাগ্য ভালো থাকলে আপনাকে না মেরে গ্রেফতার করে রাষ্ট্রের কঠিন কঠিন আইনে মামলা দিয়ে আপনাকে দীর্ঘ কারাবাসে রাখবে। কত তরুণ, মুসলিমের জীবন এভাবে তারা শেষ করে দিয়েছে। সরকারের খাতায় এখনো তারা বিভিন্ন নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। আমাকেও ১টা নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিলো। সেই মামলায় আমাকে দীর্ঘ কারাবাস করতে হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাবার পরেও সেই নিষিদ্ধ সংগঠনের নামের সাথে আমার নাম DGFI কর্তৃক যুক্ত থাকার কারণে প্রতিনিয়ত পুলিশী হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে। নিজের আসল নাম ও ছবি ব্যবহার করে লেখালেখী করার কারণে আমাকে বারবার কারাগারে যেতে হয়েছে। ৩ দফায় মোট ১১ বছর আমাকে জেলখানায় কাটাতে হয়। মূলত আমার জীবনের সোনালি সময় গুলি কারাগারেই কেটে গেছে।
তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, জেলখানায় থাকতেই আমার লেখা চুরির অনেক কাহিনী আমার গোচরীভূত হয়েছিল। যেই লেখাগুলোর কারণে আমি বছরের পর বছর জেল খেটেছি, রাষ্ট্রের কঠিন কঠিন আইনে আমাকে মামলা দেওয়া হয়েছিল সেই লেখাগুলোই পরবর্তীতে অনেকে একটু Edit, copy Paste, গল্পের আকারে প্রকাশ করে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছে। রেফারেন্সে ফারাবী ব্লগের নামটাও বলার প্রয়োজন বোধ করে নি। আমাদের সময়ে সদালাপ ব্লগটা খুব জনপ্রিয় ছিলো। আমরাও সদালাপ ব্লগ থেকে রেফারেন্স নিতাম। লেখার শেষে সদালাপ ব্লগের উদ্ধৃতি দিতাম। কিন্তু এখনকার লেখা চোরেরা কারো লেখার উদ্ধৃতি দেয় না। যেন নিজেরাই মহাপন্ডিত। সব কিছু সেই প্রথম উদ্ভাবন করেছে।
Google এ Farabi 1924 লিখে সার্চ দিলেই টুডে ব্লগের “আত তাবারী কি কোন হাদীস গ্রন্থ?” এই লেখাটা পাবেন। আমার এই লেখাটা হুবহু অনেকেই Copy Paste করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাংলায় আত তাবারী নিয়ে প্রথম লেখাটা আমিই লিখেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু বিবাহ প্রসঙ্গে নাস্তিকদের সমালোচনার জবাব” এই ব্লগটা আমি সেই ২০১২ সালে লিখেছিলাম। আমার ঐ ব্লগের প্রথমেই পার্ল এস বাক ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’ উপন্যাসের প্যারা ২টি অনেকেই হুবহু Copy Paste করেছে। সামহোয়ার ইন ব্লগে আমার ঐ লেখাটা এখনো আছে।
আরজ আলী মাতুব্বরকে নিয়ে অনলাইনে মুসলিমদের মাঝে আমিই প্রথম ব্লগ লিখি। আমার আরজ আলী মাতুব্বরের যুক্তি খন্ডন সংক্রান্ত অনেক লেখাই মানুষজন নিজের নামে চালিয়ে নিয়েছে।
আরজ আলী মাতুব্বরের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন
আরজ আলী মাতুব্বরের আখিরাত বিষয়ক যুক্তি খন্ডন
হিন্দুরা যেমন বৌদ্ধদের অনেক দেবদেবীকে হাইজ্যাক করেছিল ঠিক তেমনি আমার পুরানো ফারাবী ব্লগের অনেক লেখাই চুরি করে বই ছাপিয়ে অনেকেই লেখক হয়ে গিয়েছিল। একটু এডিট একটু কপি পেস্ট আরেকটু গল্পের আকারে এই তো আমি সেলিব্রিটি ! লেখালেখির কারনেই আমার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র মোট ৫ টি মামলা দিয়েছে, ৩৯ বছর সাজা দিয়েছে। এখন যদি দেখি যে আমার লেখা নিয়ে মানুষ বই বের করে ফেলেছে তখন তো আমি চুপ করে থাকতে পারি না। মানুষের লেখা চুরি করে বই ছেপে, বই বিক্রির টাকায় বহু প্রকাশনী ফুঁলে ফেঁপে উঠেছে। কিন্তু তারা রেফারেন্সে ফারাবী ব্লগের নামটা বলারও প্রয়োজন বোধ করেনি। বাংলার ইসলামী প্রকাশনা জগত ৩৯ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্লগার শাফিউর রহমান ফারাবীকে সঠিক প্রতিদান দিয়েছে !
আমি মূলতঃ ব্লগার। স্যামহোয়ার ইন ব্লগ, নাগরিক ব্লগ, আমার ব্লগে আমি লেখালেখি করতাম। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে ঐ সব ব্লগের Admin রা আমাকে ব্যান করে। দশ বছর পর আমার পুরনো ব্লগগুলো খুঁজে পেতে খুব সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে আমার Facebook Status গুলির কথা খুব মনে পরছে। কারো কাছে যদি আমার facebook status গুলো থাকে, তাহলে সেগুলো আমাকে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।
আমি ৩ দফায় মোট ১১ বছর জেল খেটেছি। এর মাঝে ২০১৩ সালের ৬ মাস আর ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সালের ২২ শে আগষ্ট পর্যন্ত ১০ বছর ৫মাস শুধুমাত্র লেখালেখির কারণেই জেল খেটেছি। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ আপনারা আমার এই ২ খন্ড বই কিনে আপনাদের বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনকে গিফট করবেন।
আমি মূলতঃ ইতিহাসের একটি অংশ। উগ্র নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে আমার এই লেখাগুলো এক সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিলো। আমি কখনোই কোন মাদ্রাসার পড়িনি। না আলীয়া মাদ্রাসায় না ক্বওমী মাদ্রাসায়। তারপরও মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমাকে দিয়ে দ্বীনের কিছু কাজ করিয়েছেন। যেই জাতি তার মেধাবী সন্তানদেরকে কারাগারে আটকে রাখে, সেই জাতি কিভাবে উন্নতি করবে?
যেহেতু সংশয়বাদীরা আমাকে হাতের কাছে পেয়েছে, তাই তারা সকল আক্রোশ আমার উপর মিটিয়েছে। আমার সাজা ছিলো মোট ৩৯ বছর। এই সভ্য দুনিয়ায় লেখালেখি করার কারণে কারো মোট ৩৯ বছর সাজা হয়েছে, এরকম দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ইসলামিষ্টদের উচিত এই ব্যাপারটা নিয়ে কাজ করা। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি ধর্মের পক্ষে লেখালেখি করার কারণে জেলে গিয়েছি। আর যারা আমার ধর্মকে কটাক্ষ করেছে, বিদ্রূপ করেছে তাদের কারো সাজা হওয়া তো দূরের কথা, তাদের কাউকে জেলেই যেতে হয় নি।
দুঃখজনক হলেও সত্য, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশ সেই সময় আমার নবীজী, নবীজীর স্ত্রীদেরকে নিয়ে চরম অশ্লীল সব ব্লগ লিখেছিল। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে বাধ্য হয় আমাকেও হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বেশ কিছু লেখা লিখতে হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি তাদেরকে ঘৃনা করি। ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। এই আওয়ামী সরকারের জুলুমের কারণে কত family ধ্বংস হয়ে গেছে, কত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিগত ১৫-১৬ বছরে ১টি ডানপন্থী পরিবারের ছেলেও B.C.S প্রশাসন, পুলিশ ক্যাডারে ঢুকতে পারে নি। ছাত্রলীগের সব ক্যাডাররা প্রশাসন, বিচার বিভাগে দাপিয়ে বেড়াতো। এখনো এই সব পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদেরকে হয়রানি করছে। ‘হাল নাগাদ তথ্য নেয়ার’ নাম করে বাসায় এসে মহড়া দিয়ে যায়। আমার সেই সময়ের লেখাগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। মানুষ কতটা ইসলাম বিদ্বেষী হতে পারে, আমার সেই সময়ের লেখাগুলোই তার প্রমাণ।
রকমারি তে আমার বই বিক্রি শুরু হইছে।
https://www.rokomari.com/book/511418/farabi-rochona-shomogro-1st-part
আপনি আরজ আলী নিয়ে লিখেছেন তার মানে এটা না যে, বাংলাদেশের আর কেউ এই বিষয় নিয়ে লিখতে পারবে না, বা লিখলেও আপনাকে ক্রেডিট দিতে হবে।
যদি এমন হয় তাহলে তো নাস্তিকদের বিরুদ্ধে যারাই লেখালেখি করে সবাইকেই আগে জাকির নায়েককে ক্রেডিট দিয়ে লিখতে হবে।
আরজ আলী নিয়ে আপনার আর আরিফ আজাদের লেখা পাশাপাশি রাখলেই বুঝা যায় যে দুইটা লেখা দুইজন ভিন্ন মানুষের।
তারপরও আপনি যেভাবে প্রতিনিয়ত একই গান গেয়ে যাচ্ছেন যে আমিই প্রথম এই বিষয়ে লিখছি তাই আমাকে ক্রেডিট দেওয়া উচিত ছিল বিষয়টা খুবই হাস্যকর।
আপনি ভালো লেখালেখি করলে আরিফ আজাদও কোন মুড়ি বিক্রেতা না, তিনিও অসাধারণ লেখালেখি করেন যেটা বুঝার জন্য তার বই না তার ফেসবুক পোস্ট পড়লেই সেটা বুঝা উচিত।
আরিফ আজাদের তো কোন প্রয়োজনই নাই আপনার লেখা চুরি করার কিন্তু আপনি যা শুরু করছেন তা দেখে মনে হচ্ছে যে আপনার খুবই প্রয়োজন আরিফ আজাদের নাম ভেঙ্গে একটু ফুটেজ নেয়ার।
আপনি মাজলুম, দীর্ঘদিন কারাবন্দী ছিলেন দেখে সবারই সমবেদনা আছে। তার মানে এই না যে, আপনি মনগড়া কথা শুধু বলেই যাবেন।
আপনি লিংক গুলোতে ঢুকুন আর আরিফ আজাদের বইয়ের ঐ লেখাগুলো মিলান। তাইলেই আমার কথার সত্যতার প্রমান পাবেন।