1. editor@farabiblog.com : Shafiur Rahman Farabi : Shafiur Rahman Farabi
  2. necharlenovo@gmail.com : Nechar :
বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন

আমার প্রথম জেল জীবন, চট্রগ্রাম জেল ৩য় পর্ব

ফারাবী শাফিউর রহমান
  • প্রকাশিত সময় : বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১২ জন পড়েছেন

 

জেল খানায় একটা কথা প্রচলিত আছে যে জেলখানায় ছাগল বাঘকে চড়ায় মানে আপনি জেলের বাইরে যত বড় কেউকাটাই হন না কেন জেল খানার ভিতরে আপনাকে ঐ কয়েদিদের মন মত চলতে হবে।

চট্রগ্রাম জেলখানায় বন্দীদের থাকার জায়গা গুলি কয়েকটি ভবনে বিভক্ত। ভবন গুলির নাম হল পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলি, আর ৩২ সেল ও Condemnd সেল।

সাধারন কয়েদীরা থাকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এগুলিতে। যেমন আমি প্রথমে ১ সপ্তাহ ছিলাম হাসপাতাল পদ্মায়। তারপর আমাকে পাঠানো হয় কর্ণফুলি ৫ এ। মানে কর্ণফুলি ভবনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। প্রত্যেক ভবন গুলি ছিল ৫ তলা। আমি ছিলাম ২ তলায়। ফজরের পরে রুম খুলে দেওয়া হত আমরা ফাইল শেষে ইচ্ছা করলেই কর্ণফুলি ভবনের যে কোন তলায় যেয়ে যে কারো সাথে দেখা করতে পারতাম। এটা করা যেত বিকাল ৫ টা পর্যন্ত। বিকাল ৫ টার পরে আবার ফাইল শেষে রুমে তালাবদ্ধ। সকাল বেলা আমাদের খাবার দেয়া হত একটা কাল রুটি ও ডাল। এটা খেয়েই দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা। এরপরে দুপুরের খাবার। দুপুরে সপ্তাহে ২ দিন ছোট ছোট ৩ টুকরা গরুর মাংস ও আরেকদিন ১ টুকরা মাছ দেয়া হত। আর রাতে দেয়া হত শুধু ভাত আর ডাল আর সেই বিখ্যাত বিচিওয়ালা কাঁকরোলের তরকারি। জেল খানায় ভাতের সাথে ডাল ও কাঁকরোলের তরকারিটা ছিল Common, জেল খানায় কখনো কোন ভাজি করা শাক সবজি, ডিমভাজি দেয়া হত না। আপনি যদি দীর্ঘদিন জেল খাটেন তাইলে আপনি পুইশাক, লাল শাক, ডাটা শাক, পালং শাক ও ডিমভাজির স্বাদ জিনিস টা কি ভুলে যাবেন। জেল খানায় ভাত দেয়া হত অনেক কিন্তু ভাত খাওয়ার মত তরকারী ও ডাল থাকত না। তাই প্রচুর ভাত নষ্ট হত। সব সময়ই আমার পাতে অনেক ভাত থাকত কিন্তু সামান্য একটু ডালের অভাবে আমি আর ঐ ভাত টা ভালো করে শেষ করতে পারতাম না। জেলখানায় যে ভাত নষ্ট হয় সেটা দিয়ে একটা গ্রাম খাওয়ানো যায়।

আমি জেলে যাওয়ার ১ সপ্তাহ পরেই রমযান মাস শুরু হয়। তো ভাবলাম রমযান মাসে একটু ভাল খাবার হয়ত পাওয়া যাবে। কিন্তু সেহরীতে কি দেওয়া হয়েছিল জানেন ? শুধু ডাল আর ভাত। সেহরিতে এই ডাল আর ভাত খাইয়াই আমাকে ২৫ রমযান পর্যন্ত রোযা রাখতে হইছে।    বস্তির লোকেরাও এর চেয়ে ভাল সেহরী খায়।

তবে ইফতার টা অবশ্য ভাল দেয়া হত। বুট মুড়ি, খেজুর সব থাকত। তবে আমি ইফতার করতাম কিছু ডাকাতদের সাথে। কারন এক ডাকাতের আপন চাচা চৌকায় কাজ করত। জেল খানায় রান্নাঘর কে চৌকা বলা হয়। ঐ ডাকাতের চাচা ভাল ভাল ইফতারি নিয়ে এসে দিত। আবার খুব বিচিত্র কারনে কয়েকজন ডাকাত আমাকে খুব পছন্দ করতো। তাই ইফতার টা আমার ভালই হত। আর হ্যা P.C. Card এর মাধ্যমে কিন্তু আপনি ভাল ভাল ইফতারি কিনতে পারবেন। তবে ইফতারি আসতে আসতেই শেষ হয়ে যায়। তাই P.C. Card এ টাকা থাকলেও ভাল ইফতারি কিনা যায় না।

এখন আমি আপনাদের কে Court Date জিনিসটা বুঝাবো। আপনি তো জেল খাটছেন মামলার কারনে। তো আপনার ঐ মামলা টা তো ১ সপ্তাহ পরপরই কোর্টে উঠে, শুনানী হয় বা রিমান্ডের শুনানী হয়। তো যেদিন আপনার Court Date সে দিন আপনাকে কোর্টে যেতে হবে। সকাল ৯ টা থেকেই পুলিশের ভ্যান এসে কারাবন্দীদের কে নিয়ে যাওয়া শুরু করে। এই পুলিশের ভ্যানে এত বন্দীকে উঠান হয় যে দম বন্ধ হয়ে আসে। এরপর কোর্টে যাওয়ার পর আপনাকে হাজতে ঢুকান হবে। সেই ব্রিটিশ আমলের হাজত খানা। ৫০ জনের থাকার জায়গার রাখা হয় ২৫০-৩০০ জনকে। দম বন্ধ হয়ে আসে। তবে সেইখানেও একটা বিরাট বাণিজ্য আছে। আপনার কোন আত্মীয় স্বজন এসে কোর্টের কোন পুলিশকে ২০০ টাকা দিলে আপনাকে সারাদিন হাজতের বাইরে রাখবে। আপনি ঐ আত্মীয়ের সাথে কথা বার্তা বলতে পারবেন। ঐ আত্মীয় আপনার হাতে টাকা পয়সা দিতে পারবে। তো Court Date এ আমার পিতা আমার ঐ পুলিশের আত্মীয় ও শিবিরের নেতা কর্মীরা আমাদের সাথে দেখা করত। আমার পিতা তো মৌলভীবাজার জেলা থেকে উদয়ন ট্রেনে একদিনের জন্য চট্রগ্রামে আসতো আবার পরের দিন চলে যেত। তো আমি আমার পিতা কে জিজ্ঞাস করলাম টিকিট না পেলে রাতে এত দূর যাও কিভাবে ? আমার পিতা উত্তরে বলল- “ ট্রেনের নিচে পেপার বিছিয়ে নিচে বসে কোন ভাবে চলে যাই। ” এই কথা টা আমার জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক একটা বাক্য।

আমাদের ২৪ জনের মাঝে বিচারক ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে প্রথম ১২ জনের। এরমধ্যে আমিও ছিলাম। প্রথমে ৯ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তারপর আমি সহ আরো ২ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশের রিমান্ড ২ ভাগে বিভক্ত। একটা হল আপনি পুলিসের হাতে গ্রেফতার হলেন তারপর আপনাকে জেলে প্রেরন করার আগেই রিমান্ড মঞ্জুর করা হল। তো ঐ রিমান্ডে আপনাকে পুলিশ ইচ্ছা মত মারতে পারে যেমন আমাদের কে হালিশহর পুলিশ লাইনে রাতের বেলার গরু মারা মেরেছিল। আবার আপনি জেলে যাওয়ার পর যদি পুলিশ আপনাকে রিমান্ডে নেয় তাইলে ঐ রিমান্ডে বেশী একটা মাইরধর করতে পারে না। কারন হাইকোর্টের একটা রায় আছে যে রিমান্ডে মাইরধর করা যাবে না। আর জেল থেকে রিমান্ডে নিলে তখন আপনার অভিভাবক হল জেলার। আপনার শরীরে কোন ক্ষতি হলে জেলার পুলিশের কাছ থেকে আপনাকে নিবে না। আর সর্বোপরি আপনি যদি কিছু টাকা আপনার মামলার IO মানে investigation officer কে দেন তাইলে রিমান্ডে উনি আপনাকে কোন মাইরধর করবে না। আর রিমান্ডে নিতে পারে শুধু আপনার মামলার IO বা investigation officer। তো আমাদের পক্ষ থেকে পুলিশ কে ৩০০০০ টাকা দেয়া হয়েছিল যেন মাইরধর না করা হয়। আমার রিমান্ড টা পরে রমযান মাসে। বিকাল বেলা হাটহাজারী থানা থেকে পুলিশের গাড়ি এসে আমাদের ৩ জনকে নিয়ে যায়। ইফতারের আগে আগে হাটহাজারী থানায় পৌছি। ইফতার ঐখানেই করি। তারপর রাত ১০ টায় আমার ডাক পড়ে। আমাকে একটা পুলিশ এক SI এর রুমে নিয়ে যায়। মাটিতে বসতে বলে। আমি স্যান্ডেল খুলে মাটিতে বসি। প্রথমেই জিজ্ঞাস করে কি কর শিবির না ছাত্রদল না হিযবুত তাহরীর ? আমি উত্তরে বলি আপাতত রাজনীতি থেকে দূরে আছি। তবে একসময় করতাম। তখন ঐ SI বলে তোমার দেশের বাড়ি ব্রাক্ষনবাড়িয়া সদরে পুলিশ গেছিল। কিন্তু এলাকাবাসী কেউ তোমাকে চিনে নাই।    এর কারন কি ? আমি তখন বললাম আমরা এলাকায় থাকি না। পিতার সরকারী চাকুরী করার কারনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিলাম। শুধু ঈদে ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় যাই। এইজন্য ব্রাক্ষনবাড়িয়ায় আমাকে কেউ না চিনাই স্বাভাবিক। এরপর জিজ্ঞাস করল রোযা রাখছ ? আমি বললাম হ্যা রাখছি। তারপর আমাকে চলে যেতে বলল। আমার সাথে বাকী ২ জনেরও একই প্রশ্নোত্তর পর্ব হইছিল। ২০১০ সালেও রাজনৈতিক মামলা গুলির রিমান্ডে সাধারনত মাইরধইর করা হত না। কিন্তু খুন অস্ত্র মামলা নারী নির্যাতন ওইসব মামলায় প্রচুর মাইরধইর করা হয়। মাইরা এক্কেবারে শুয়াইয়া ফেলা হয়। এক একটা বারি যে দেয় ৭ মন ওজন। ঐ সব মামলায় সব সময় টাকা দিলেও কিছু হয় না। রিমান্ডে একটা Common মাইর হইল পা দুইটা উলটা কইরা মাথা নিচে শুয়াইয়া এরপর মাইর দেয়া। ঐরকম আংটা দেয়ালে অনেক লাগানো দেখলাম। বুঝেনই তো বিচিত্র দেশে বিচিত্র কারবার।

আমি জেল খানায় সবচেয়ে বেশী পেয়েছি অস্ত্র, ডাকাতি ও নারী নির্যাতন মামলার কারনে আটকা প্রাপ্ত ব্যক্তি। এরমধ্যে নারী নির্যাতন কেইস গুলি খুবই ভয়ংকর। একবার কোন ছেলে নারী নির্যাতন কোন কেইসে ফাইসা গেলে এর খবর আছে। হয় খালাস নয় সাজা। নারী নির্যাতন কেইসে জামিন খুব কম দেয়া হয়। দিলেও ১ বছর পরে। তাও আবার হাইকোর্ট থেকে। হাইকোর্টে যাওয়া কি সোজা কথা ? প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, এরপরে জজ কোর্ট এরপরে হাই কোর্ট। হাইকোর্ট পর্যন্ত যাইতে আপনার বাপ মায়ের খবর হইয়া যাবে। তাই ভাই আর যাই করেন কখন কোন মেয়েলী ব্যাপারে জড়িত হইয়েন না। যেইসব বন্ধুর চরিত্রে সমস্যা আছে তাদের থেকে দূরে থাকেন। কারন বন্ধুর মামলার এজহারে আপনার নামও এসে পড়তে পারে। আর কখন কোন মেয়ের সাথে কোন প্রেমের সম্পর্কই রাখার দরকার নাই। কারন যতগুলি Young ছেলেকে আমি নারী নির্যাতন মামলায় জড়িত হতে দেখছি এদের মধ্যে বেশীর ভাগই ঐ মেয়ের সাথে একটা প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

একটা সময় আমার বস্তির লোকদের দেখলে খারাপ লাগত। কিন্তু ১ মাস জেল খাটার পর আমার আর বস্তির লোকদের দেখলে আর খারাপ লাগে না। কারন ঢাকার বস্তির লোকেরা চাইলেই রামপুরা খিলগাঁও মিরপুর থেকে ঘুরে আসতে পারে। কিন্তু চট্রগ্রাম জেল খানায় ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় আটক সেনা বাহিনীর সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল, মেজর জেনারেল রাও জেল খানায় ডিভিশনে বসে অলস দিন কাটাতে হয়। একটা সুস্থ সবল মানুষ সারাদিন একটা ৫ তলা ভবনে আবদ্ধ আর বিকাল ৫ টার পর মুরগির খোয়ারের মত রাত কাটান সেটা যে কি কষ্টকর এটা যে জেল খাটছে সেই জানে।

“ জেলের ভিতর জেল আর সেটা হচ্ছে সেল। ” আমি গত পর্বে আপনাদের কে ৩২ সেলের কথা বলছিলাম। এটা হল ২ তলা একটা বিল্ডিং। ৩২ টা রুম আছে সেখানে। প্রতি রুমে ৬ জন করে থাকে। বিকাল বেলা ৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত ৩২ সেলের লোকদের কে মাত্র ২ ঘণ্টার জন্য বারান্দায় হাটাহাটি করার সুযোগ দেয়া হইত। আর বাকি সারা দিন ঐ ছোট সেলে বসে তাদের ঝিমাইতে হত। আমরা হাজতিরা তো ফজরের পর থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত যে কোন তলার যে কোন ওয়ার্ডে যেতে পারতাম কিন্তু ৩২ সেলের লোকদের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। এই ৩২ সেলে জে এম বি, হরকাতুল জিহাদ, শিবির ক্যাডার নাসির, পেশাগত খুনীদের কে রাখা হত।

আর ফাঁসীর আসামীদের কে রাখা হইত ১ তলা বিল্ডিং এর Condemned সেলে। সেখানে লেখা “ হতাশ হইও না আয়ু কমে যাবে। ” আরে আয়ু কমার জন্যই তো Condemned সেলে থাকি।

আবার যেই সব কয়েদী জেল খানার ভিতর নিজেরা সমকামিতায় লিপ্ত হত তাদের কেও শাস্তি স্বরুপ সেলে রাখা হত। জেল খানার ভিতর সবচেয়ে বাজে ব্যাপার টা ছিল সমকামিতা। জেল খানায় অনেকেই যুবক হিসাবে ঢুকে আর বৃদ্ধ হয়ে বের হয়। মানুষের জীবনে জৈবিক চাহিদা এটাকে তো আর অস্বীকার করা যায় না। ইউরোপের জেল খানায় কিন্তু ঠিকই বিবাহিত কয়েদীদের কে তাদের স্ত্রীদের সাথে একান্ত সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়া হয়। এই নিয়ম টা বাংলাদেশেও চালু করা উচিত। জেল খানায় কেইস টেবিল বলে একটা কথা আছে। বাংলায় যেটার নাম হল বিচার বৈঠক। বন্দীরা যারা নিজেদের ভিতর মারামারি করে বা কোন কারারক্ষীদের সাথে কোন বেয়াদপী করলে তাদের কে এই কেইস টেবিলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর কারারক্ষীরা এত মাইর মারে যে সে পুড়া অসুস্থ হয়ে যায়। অনেক বন্দী এই কেইস টেবিলের মাইর খেয়ে অসুস্থ হয়ে পরে মারা গেছে এমন ঘটনাও আছে।

জেল খানায় সবচেয়ে যে জিনিস টা আমার বিরক্ত লাগছে তা হল ধরেন আপনি মাদক মামলার কারনে জেলে আসলেন। আপনার ঐ মামলায় সাজা হবে সর্বোচ্চ ২ বছর। এখন আপনি যদি আপনার কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ না করতে পারেন তাইলে কিন্তু আপনাকে ৫ বছরও জেল খাটতে হতে পারে। এরকম বহুত লোক জেলে পঁচতাছে যে তার মামলার যে সাজা হইত তার থেকেও সে বেশিদিন জেল খাটতাছে কিন্তু বাইর হইতে পারতাছে না শুধু একজন উকিলের অভাবে। আর সরকারি ভাবে যে অসহায় দরিদ্র লোকদের জেল খানায় যে আইনগত সাহায্য দেওয়ার কথা আছে তা শুধু মাত্র কাগজে কলমেই আছে। আমি ১টা লোককেও পাইলাম না যে সরকারী আইনজীবীর মাধ্যমে জেল থেকে ছাড়া পাইছে। আপনার কোন আত্মীয় স্বজন যদি জেল খানায় আপনার কোন খোজ খবর না নেয় তাইলে আপনাকে বছরের পর বছর জেলে পঁচতে হবে এখন আপনার মামলা টা যত সাধারনই হোক না কেন। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ হচ্ছে ধনীবান্ধব। টাকা ওয়ালাদের জন্য এইখানে কোন আইন লাগে না।

২০১৯ সালে করোনার সময়ে কারাগারে সীমিত আকারে ফোনে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সেটা আমরা পাইনি। আমরা সরকারি ফোনে কথা বলার সুযোগ পাইছি ৫ই আগস্টের পরে।

জেল খানায় আর যে জিনিস টা খুব খারাপ লাগছে তা হল কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ করতে না পারা। সরকার যদি এত লোককে জেল খানার ভিতর Free খাওয়াইতে পারে তাইলে এই লোকদের কে মোবাইল ফোনে তার আত্মীয় সজনদের সাথে সপ্তাহে একদিন কথা বলার সুযোগ করে দিলে কি হয়। অনেক বন্দী আছে শুধুমাত্র আত্মীয় সজনদের সাথে যোগাযোগ না করতে পারার কারনে বছরের পর বছর জেল খাটতাছে। আর ঐ ব্যক্তির পিতা মাতাও জানে না যে তার ছেলে দুনিয়াই আছে না মারা গেছে না জেলের কোন ওয়ার্ডে আছে। বাংলাদেশের মত এত বিশ্রী দেশ মনে হয় এই পৃথিবীতে আর কোথাও নেই।

জেল খানায় আমাদের মুল কাজটা ছিল পানি সংগ্রহ করা। ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের সাথে হুড়াহুড়ি করে আমাকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হত। এই পানি সংগ্রহ করতেই আমার দিনের ২-৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় হত।

তো যাই হোক ২৫ রমজানে আমি জামিন পাই আর জেল খানা থেকে মুক্তি পাই। জেল খানা থেকে মুক্তি পাবার পর আমি আমার আপন ফুফুর বাসা চট্রগ্রামের ফৌজদারহাটে যেয়ে ফৌজদারহাট পুলিশ ফাড়ির পিছনে যে পুকুর টা আছে সেখানে ১ ঘণ্টা ডুব দিয়ে থাকি।    কারন জেল খানায় আমি একদিনও ভাল ভাবে গোসল করতে পারি নাই শুধু পানির অভাবে। আমি দোয়া করি আমার যে চরম শত্রু সেও যেন কখনো জেলে না যায়। নরকের একটা অংশ হল বাংলাদেশের জেল খানা গুলি। মশার কামড়ে এক রাতও জেলখানার ভিতরে শান্তিতে ঘুমাইতে পারি নাই। আর জেল থেকে মুক্তি পাবার পরও আমাকে ১ বছর কোর্টে মিথ্যা ঐ ৩ মামলার জন্য মাসে ১বার করে হাজিরা দিতে হইছে। তারপর ১ বছর টানা হাজিরা দেয়ার পর আমি খালাস পাই। রাজনৈতিক মামলা গুলাতে কোন সাক্ষী পাওয়া যায় না। কোন বাপের বেটাও নাই যে রাজনৈতিক মামলায় সাক্ষী দিবে।    আর এই কারনে রাজনৈতিক মামলায় যারা ধরা পরে তারা সবাই খালাস পেয়ে যায়। খুনের মামলায় সাক্ষীর অভাবে কত বড় বড় খুনী খালাস পেয়ে গেল। আর এই জন্যই তো বাংলাদেশে ইন্ডিয়ার এনকাউন্টারের সাথে মিলাইয়া ক্রসফায়ার সংস্কৃতির সুচনা হইছে।

যাই হোক সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। আমি জেল খাটছি এটা হয়ত আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা আমাকে একটা পরীক্ষা নিল যে আমি জেল খানায় থেকেও নামায রোযা করি কিনা ? খুশির বিষয় হল এই যে আমি জেল খানায় থেকেও সব গুলি রোযা রাখছি আর মাঝে মাঝে ওয়ার্ডে ইমামতিও করছি। ১ ওয়াক্ত নামাযও আমি ছাড়ি নাই। তাই বলে আমি কিন্তু আবার জেলে যেতে ইচ্ছুক না ।

অন্যদের পড়ার সুযোগ করুন...

                 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য লিখা

ফেসবুকে যুক্ত হোন

Why I’m Asking For Donation?

© All rights reserved © 2025 Farabi Blog
Developed by ItNex BD