
জেলখানার আসামীরা ৩ ভাগে বিভক্ত। হাজতী, কয়েদী, ফাঁসি। হাজতী মানে হচ্ছে Under trial Prisoner, কয়েদী মানে হচ্ছে convicted. আর ফাঁসি মানে হচ্ছে Death Sentence. এদের মধ্যে যারা হাজতী তারা বিচারাধীন বন্দি। তাদের দ্বারা কোন কাজ করানো হয় না। তাদের কাজ হচ্ছে শুধু কোর্টে গিয়ে হাজিরা দেওয়া। মামলা নিষ্পতি হবার আগ পর্যন্ত তাদেরকে নিয়মিত কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়। যারা হাজতী তাদের জামিন হওয়াটা তুলনামূলক সহজ। কারন এখনো সে convicted/দোষী বলে সাব্যস্ত হয়নি। অর্থ্যাৎ নিম্ন আদালতে দোষী বলে সাব্যস্ত হয়নি। কিন্তু একজন হাজতী আসামী যখন বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কয়েদী হয় তখন তার জামিন পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যায়। তবে সব সাজার ক্ষেত্রে এই কথাটা প্রযোজ্য নয়। মূলত যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামীদের ক্ষেত্রেই জামিন পাওয়াটা কঠিন। তবে কারো যদি ৫/১০ বছর সাজা হয় তাহলে তার জামিন পাওয়াটা তুলনামূলক ভাবে সহজ।
যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামীর জামিন শুনানীর জন্য হাইকোর্টে বেঞ্চ খুবই কম। আর উচ্চ আদালত মূলত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীর জামিনের চেয়ে তার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশী আগ্রহী থাকে। প্রত্যেক সাজাপ্রাপ্ত আসামীকেই তার মামলা হাইকোর্টে খালাস করতে হয়।
আর কোন হাজতী আসামীর বিচার প্রক্রিয়ায় যদি নিম্ন আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দেয় তাহলে তাকে ফাঁসির আসামী বলে মৌখিক ভাবে। তবে তার care card এ কয়েদী নাম্বারই দেয়া থাকে। কারন ফাঁসির আসামীও তো একজন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। ফাঁসির আসামীর সব লিখিত Document লাল কালিতে লেখা হয়। কারন মৃত্যুর রঙ লাল। তবে কয়েদী কাপড়ের রং সাদা হয়। যেন শুভ্রতা দ্বারা মনকে পরিশুদ্ধ করা যায়।
ফাঁসির আসামীর জামিনের কোন System নাই।ফাঁসির আসামীকে অবশ্যই তার মামলা উচ্চ আদালতে খালাস করতে হবে অথবা মেয়াদী সাজা (১০,২০,৩০) বছর আনতে হবে। তা না হলে সে কোনদিনও কারাগার থেকে মুক্তি পাবে না।
আমি জামিন পাওয়ার পর এই পর্যন্ত একবারও হাইকোর্টে যাইনি। কিন্তু হাইকোর্টের যে সকল এডভোকেট আমার জামিন করেছে তারা আমাকে দেখতে খুব চাচ্ছে কিন্তু হাইকোর্টে গেলেই আমার মনে হবে পুরা হাইকোর্ট আমার উপর ভেঙ্গে পড়বে, এই ভার আমি বহন করতে পারবো না। ৩৯ বছর দন্ডপ্রাপ্ত কয়েদি হাইকোর্ট কে ভয় পাবে এটাই তো স্বাভাবিক।
জেলখানার ভিতরে যারা রান্না করে সেইসব আসামীরা হাজতীদের তেল,মসলা ছাড়া নিম্নমানের খাবার দেয়। এগুলোর ভাগ কারারক্ষী জমাদাররাও নেয়। অথচ, মান সমান হওয়ার কথা। জেলখানা মানে সংশোধনকেন্দ্র নয়, আযাবখানা। নানা অনিয়ম ও অন্যায়ের নিয়মিত আখড়া। তাই একটা প্রবাদও আছে : জেলখাটা ঘুঘু।
বিহারি ক্যাম্পের কেউ জেলে আসলে তাকে দিয়ে বাধ্যতামূলক ভাবে সুইপার দফার কাজ করানো হয়। ব্যাপারটা খুবই বেদনাদায়ক।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের সবাইকে কারাগার, কোর্ট কাচারী, হাজতী, কয়েদী, ফাঁসি এই জাতীয় Tag থেকে মুক্ত রাখুন। আমীন
তবে আল্লাহর রাসূলের পক্ষে লেখালেখি করে কয়েদি পোশাক পরার চেয়ে উত্তম মর্যাদা এই পৃথিবীর মাঝে আর কিছু হতে পারে না।