
আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালার সিফাত সম্পর্কে সঠিক ধারনা না থাকার কারনে আমরা অনেক সময়ই শয়তানের পাল্লায় পরে ঈমানহারা হয়ে যাই। আমি এখানে আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালার সিফাত সম্পর্কে আপনাদের কে একটি সঠিক ধারনা দিব যাতে ইবলিশ শয়তান আপনাদের কে বিভ্রান্ত না করতে পারে।
ধরেন ১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যা হল ৬০, ঐখানে ভর্তি পরীক্ষা দিল ১০০ জন। এখন ১০০ জনের মাঝে প্রত্যেকেই যদি আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালার কাছে দোয়া করে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের admission পাওয়ার ব্যাপারে, তাহলে ১০০ জনের কি ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে chance পাওয়া সম্ভব ? এটাতো গাণিতিক ভাবেও সম্ভব না, আসন সংখ্যা হল ৬০ আর ১০০ জনের ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সযোগ পাওয়া। তো দেখা যাচ্ছে সবার ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার দোয়াটা টেকনিক্যালি মঞ্জুর হওয়া সম্ভব না। আমরা যে অনেক সময় আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালার কাছে দোয়া করি, কিন্তু সকল দোয়া গুলি যে কবুল হয় না এর অন্যতম কারন হল আপনার দোয়ায় প্রার্থিত বস্তুটি টেকন্যাকালি বা গাণিতিকভাবে আমরা সবাই একসাথে পেতে পারি না। দুনিয়ার রীতিতে এটা অসম্ভব।
তবে ১০০ শিক্ষার্থীই ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে তখন সেক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমি আসলে দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারটা আপনাদের কে খুব সরলীকরণ করে বুঝাতে চেয়েছিলাম। আর ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই। ব্যতিক্রম কখনো উদাহরন হতে পারে না। আর ব্যতিক্রম ঘটনা গুলি আমাদের সমাজে খুব কমই ঘটে।
কারাগারে থাকতে অনেক দোয়াই করতাম সেই সময় ঐ দোয়াগুলি টেকনিক্যাল কারণে কবুল হওয়া সম্ভব ছিল না কারন দোয়া গুলো কবুল হওয়ার জন্য আগে আমাকে মুক্ত জীবনে আসতে হবে। কিন্তু এখন যেহেতু আমি মুক্ত আলো বাতাস ঘুরতে পারছি তাই আমার জেলখানায় করা সেই দোয়াগুলি কবুল হতে দেখছি।
আল্লাহ সুবহানু ওয়াতায়ালা মানুষকে একদম ক্ষমতাহীন ভাবে তৈরী করেন নি। আল্লাহ সবহানু ওয়া তায়ালা মানুষকে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন, কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন আপনার সামনে একদল পিঁপড়া হেটে যাচ্ছে, আপনি চাইলেই ঐ পিঁপড়াকে পায়ে দলিয়ে মেরে ফেলতে পারেন। সাধারণত আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা মানুষের এই সকল কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। কারন দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তো আপনাকে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। এখন আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালা যদি আপনার কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে আপনার পরীক্ষা নেওয়া হল কোথায়? সেইক্ষেত্রে তো দুনিয়ার জীবন আখিরাতের জীবনে রূপান্তরিত হয়ে গেল।
যেহেতু আল্লাহ পাক আপনাকে চিন্তার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন তাই সেক্ষেত্রে দুনিয়ার জীবনে আপনি কোন আসমানী হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে আপনার সকল কাজকর্ম সম্পাদনা করতে পারবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানুষকে দেয়া আল্লাহ সুবহানুওয়া তায়ালার এই চিন্তার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতা কেই মুক্তমনারা সৃষ্টিকর্তার নিষ্ক্রিয়তা হিসাবে সাব্যস্ত করে।
কর্মের স্বাধীনতা সকল প্রাণীর আছে। কিন্তু চিন্তার স্বাধীনতা, নিজের জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর ক্ষমতা শুধু মানুষেরই আছে। আর এই জন্যই প্রাণীকূলের মাঝে শুধু মানব জাতিরই আখিরাতে হিসাব নিকাশ হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা এই দুনিয়ার জীবনটা আসবাব উপায় উপকরণ উপর নির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন, এখানে হঠাৎ করে কিছু হয় না, যা হয় তার সবকিছুই কার্যকরণ ভিত্তিকভাবে হয়ে থাকে। হঠাৎ করে এই পৃথিবীতে কিছু হয় না আর এটা আল্লাহ সুবাহানাতায়ালার রীতিও না। ব্যাপারটা একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলি।
মিরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বোরাকে চড়ে খুব দ্রুত গতিতে মক্কা থেকে বায়তুল মোকাদ্দাস এরপর সপ্ত আসমান ঘুরে এসেছেন কোন রকম শারীরিক কষ্ট ছাড়াই। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে গিয়েছিলেন তখন উনি উটের পিঠে চড়ে, সাওর পর্বত গুহায় লুকিয়ে থেকে কাফেরদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কত কষ্ট করে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছেন, মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করতে নবিজীর মোট ৯ দিন সময় লেগেছে, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা তো চাইলেই পারতেন মিরাজ রজনীর মত বোরাকের ন্যায় দ্রুত গতিতে নবীজী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চোখের পলকে মক্কা থেকে মদীনায় নিয়ে যেতে, আর এটা আল্লাহ সুবহানু ওয়াতায়ালার জন্য কোন কঠিন কিছু ছিল না ,
কিন্তু আমি আগেই বলেছি দুনিয়ার জীবনটা যেহেতু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কার্যকরনভিত্তিক ভাবে তৈরী করেছেন তাই উনি দুনিয়ার জীবনের সবকিছুই একটা স্বাভাবিক রীতিতে পরিচালনা করেছেন, ঠিক এই কারনেই মিরাজ রজনীতে আল্লাহর রাসুল খুব দ্রুতগতিতে সপ্ত আসমান ঘুরে আসতে পারলেও দুনিয়ার জীবনের মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার সময় উনাকে অনেক কষ্ট করে কাফেরদের চোখকে ধূলো দিয়ে মোট ৯ দিনের মাথায় মক্কার কুফরি সমাজ থেকে মদীনায় উনার নিজ কর্তৃত্ত্বধীন ইসলাম সমাজে আসতে পেরেছেন। আর দুনিয়ার জীবনের স্বাভাবিক নিয়মের কারনেই আল্লাহর রাসূলকে এতটা কষ্ট করতে হয়েছে।
এরকম অনেক তত্ত্বীয় যুক্তিনির্ভর আলোচনা আমি আমার সদ্য প্রকাশিত ” ফারাবী রচনা সমগ্র ১ম খন্ড, ২য় খন্ড ” বইয়ে প্রকাশ করেছি।
ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহ আলাইহির “কিমিয়ায়ে সাআদাত/সৌভাগ্যের পরশমনি” বইতে তাকদীর, আখিরাতের যুক্তিভিত্তিক বিশ্বাস এইগুলির উপর বেশ ভালো আলোচনা আছে। ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহ আলাইহির বইগুলো সবাই কে পড়ার অনুরোধ রইলো।