1. editor@farabiblog.com : Shafiur Rahman Farabi : Shafiur Rahman Farabi
  2. necharlenovo@gmail.com : Nechar : Nechar Uddin
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন

কুরবানী প্রথাকে নিয়ে অজ্ঞেয়বাদীদের কিছু আবোল-তাবোল প্রশ্নের জবাব

ফারাবী শাফিউর রহমান
  • প্রকাশিত সময় : মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৫৪৫ জন পড়েছেন

ভার্চুয়াল জগতে অজ্ঞেয়বাদীরা প্রায়ই মুসলমানদের কোরবানী প্রথা কে কটাক্ষ করতে চাচ্ছে। অজ্ঞেয়বাদীরা বলতে চাচ্ছে যে আমরা মুসলমানরা নাকি ঈদুল আযহার নামায পড়ে উৎসব করে পশু হত্যায় মেতে উঠি। প্রকৃতিতে মাংসাশী প্রাণীরা প্রতিদিন শত শত পশুকে হত্যা করে খাচ্ছে তো এটা কি মুক্তমনা সমাজের কাছে নিষ্ঠুরতা বলে গন্য হবে না ? যদি মাংসাশী প্রাণীর প্রাণী হত্যা নিষ্ঠুরতা না হয় তাহলে মুসলমানদের কোরবানী প্রথা কিভাবে নিষ্ঠুরতা হবে ? হিন্দুদের কালী পূজায় তো শত শত পাঠা বলি দেওয়া হয়, কই কখনো তো দেখলাম না অভিজিৎ গংরা পাঠা বলি নিয়ে একটা ব্লগ লিখতে ? আমেরিকার শিকাগো শহরে কোন উৎসব ছাড়াই প্রতিদিন হাজার হাজার গরু ছাগল কেটে প্যাকেট করা হয়, আমেরিকানরা সকল খাবারে বিফ খাবেই সেটা দোষ না আর মুসলমানরা বছরের কয়েকটা দিন মাংস খাবে সেটাই এখন মুক্তমনাদের কাছে আমাদের সাফাই সাক্ষী দিতে হবে।

বাজারে বর্তমানে গরুর মাংসের কেজী ৮০০ টাকা। আমি আপনি কি কখনোই বাজার থেকে ৫ কেজি গরুর মাংস কিনে নিয়ে এসে গরীবদের কে খেতে দিয়েছি ? না কখনোই দেয় নি। কিন্তু কুরবানীর ঈদের দিনে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার যারা কিনা প্রতিবেশী বা কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে ১ ভাগ গরু দিয়েছে তারাও কিন্তু নিজ হাতে কম পক্ষে ৫ কেজী গরুর মাংস গরীব মিসকীন দের কে দিয়েছে খুশী মনে। এই যে একটা মধ্যবিত্ত পরিবার খুশী মনে ৫ কেজী গরুর মাংস দুঃস্থ মানুষ কে দান করল এটা কি কোন ছোট খাট ঘটনা ? চিন্তা করে দেখুন ঈদুল আযহার দিনে বাংলাদেশের একজন কৃপন গৃহ স্বামীও কিন্তু ৫ কেজী গরুর মাংস নিজের ঘর থেকে খুশী মনে দিবে দুঃস্থ ব্যক্তিদের কে। এই যে বাংলাদেশের মত ৩য় বিশ্বের একটা দেশের নাগরিক যারা কিনা প্রতিদিন দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেও নিঃস্বার্থ ভাবে ৫ কেজী গরুর মাংস দান করার মত এতবড় একটা ঔদার্য্য দেখিয়েছে এটা কে কিছু মূর্খ নাস্তিক, তথাকথিত মুক্তমনা ও ইসলাম বিদ্বেষীরা পশু হত্যা নামে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। তারা বলতে চাচ্ছে মুসলমানরা নাকি খুব নিষ্ঠুর।  ইকো সিস্টেম হিসাবে এক প্রাণী আরেক প্রাণীর মাংস খাবে এটাই তো স্বাভাবিক। মানুষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়াআলার ইবাদত করবে আর সেই কারনেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়াআলা মানুষ কে তার প্রাণীকূল কে হালাল করার অনুমতি দিয়ে রেখেছেন। গ্রাম এলাকায় ঘরে কোন মেহমান আসলে মেহমানের সম্মানার্থে কিন্তু ঠিকই ঘরের বড় মোরগ টাকে জবাই করা হয়। এই মোরগ টাকে জবাই কিন্তু আমরা সবাই আনন্দ সহকারেই করি কারন এর দ্বারা ঘরের মেহমান কে ভাল ভাবে আপ্যায়ন করা যাবে। প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুই কষ্টকর।  জবাই করার সময় একটা মুরগীরও যে কষ্ট হয় গরু মহিষেরও ঠিক একই কষ্ট হয়।   কুরবানীর ২ দিন আগে দেশের প্রত্যেকটা শহুরে বাড়িই বলতে গেলে একটি গৃহস্থের বাড়িতে পরিনত হয়। ঈদের ২ দিন আগে থেকেই গরু কে পালতে হয়, গরুকে খৈল ভুষি খাওয়াইতে হয়। অনেকটা গ্রামের গৃহস্থের বাড়ির মতন। শহরের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যারা জীবনে কখনোই ঐ রকম ভাবে গরু ছাগলের কাছে আসে নাই তারাও তখন গরু ছাগলের গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। এটাও কিন্তু মানব জীবনের একটা সৌন্দর্য্য। কসাই পেশা এটা কোন খারাপ পেশা নয়। সমাজের ৮-১০ টা হালাল পেশার মত কসাই পেশাও একটা হালাল পেশা। কুরবানীর দিন আমরা আমাদের জীবনের স্বাভাবিক প্রয়োজনের তাগিদায় শুধু একদিনের জন্য কসাই হই। ব্যাস আর কিছু না। এর সাথে তথাকথিত পশু হত্যা বা নিষ্ঠুরতার কোন সম্পর্ক নাই। মুক্তমনা সমাজ দয়া করে আপনারা জ্ঞান পাপী হবেন না।

বাংলাদেশের নাস্তিকদের আদি পিতা আরজ আলী মাতুব্বর উনার “সত্যের সন্ধান” নামক বইতে বলতে চেয়েছেন যে প্রতি বছর এত এত পশু কোরবানী দিলে নাকি কৃষি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পশুর অভাব পড়বে। আচ্ছা মুসলমানরা তো আর প্রতিদিন কোরবানী দেয় না, বছরে একবার দেয়। দেখা যায় কোরবানীর পর প্রায় ২ মাস কসাইখানায় আর তেমন একটা পশু জবাই হয় না। ফলে পশুর সংখ্যার মাঝে ঠিকই কিন্তু একটা ভারসাম্য বজায় থাকে। তাছাড়া ট্রাক্টর আবিস্কারের পূর্বে মুসলমানরা যে এত এত গরু কোরবানী দিল কই ইতিহাসে তো কখনো কোথায় লেখা নেই যে জমি চাষ করতে যেয়ে গরুর অভাব পড়েছে। কোরবানী ছাড়াইতো প্রতিদিন হাজার হাজার পশু জবাই হচ্ছে আমেরিকার শিকাগো শহরে কই তখন তো আরজ আলী মাতুব্বরের কোন সমস্যা হয় না ? হিন্দুরাও তো বিভিন্ন পূজায় পাঠা বলি দেয়, তখন কি পশুর সংখ্যা কমে না? আরজ আলী মাতুব্বরদের কাছে খালি মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করলেই দোষ হয়। বর্তমানে ভারতে গো খাদ্যের পিছনে অহেতুক প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। এই ট্রাক্টরের যুগে এত গরু দিয়ে ভারত কি করবে ?  গরু নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করার করুন ইতিহাস আমরা শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ” মহেশ ” গল্পে পাই।

 

গ্রামের বাড়িতে কোন অতিথি আসলে অতিথির সম্মানার্থে ঘরের বড় মোরগ টাকে জবাই করা এটা মানব জীবনের একটা স্বাভাবিক দিক। ঠিক তেমনি দীর্ঘ দিন পর আমরা সকল আত্মীয় স্বজন মিলে পেট পুড়ে গরুর মাংস খাবো এই আনন্দে যদি আমরা ৪-৫ জন শরীক মিলে একটা গরু কুরবানী দিয় তাতে কি কোন দোষ বা অন্যায় থাকার কথা ? আর এই খুশিতে যদি কোন দোষ থাকে তাইলে মুক্তমনা সমাজ আপনারা এখন থেকে আপনাদের ঘরে কোন অতিথি আসলে বাজার থেকে আর মাংস কিনে আনবেন না।  আপনি হয়ত বলতে পারেন যে এক সাথে এত গরু কোরবানী দিলে মাংসের অপচয় হবে। তখন আমি আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দিব যে যখন দেশে ফ্রীজ ছিল না তখনও কিন্তু আমাদের দাদী/নানীরা কুরবানীর মাংস চুলায় জাল করে করে অনায়াসেই ১ মাস ধরে খেয়েছে। কুরবানীর পর দেশের সব এলাকায় ঘরে গরুর মাংস দিয়ে নানা রকম খাবার যেমন গরুর মাংসের বিফ বার্গার ইত্যাদি তৈরী করা হয়। তাছাড়া সকাল বেলায় ভাতের বদলে মাংস ঝুড়ঝুড় করে খাওয়া হয়। অর্থ্যাৎ কুরবানীর মাংস যেটা গরীব লোকদের কে দান করে ঘরে থাকে তার এক টুকরা মাংসও অপচয় হয় না। এটা আমাদের দাদী/নানীর সময়েও হত না আর এখন তো ফ্রীজের যুগ। এখন তো আমরা সবাই কুরবানীর মাংস ফ্রীজে রেখে একটানা ২ মাস ধরে খাই। মুক্তমনা সমাজের প্রশ্নগুলি এত হাস্যকর আর silly যে আমাকে এগুলির উত্তর দিতে গিয়ে দাদী নানীর রান্নাঘরের কাহিনী গুলি বলতে হচ্ছে।

 

বাংলা সাহিত্যে একটা কথা আছে  “যাকে দেখতে পারি না তার চলন বাকা” । ব্যাপারটা অনেকটা এরকম যে শুধু বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করা। নাস্তিকতার নামে ক্রমাগত মিথ্যা চর্চা করতে করতে বর্তমানে নাস্তিকরা এখন মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে ইসলামের বিরোধীতা করতে যেয়ে অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব যুক্তি দিচ্ছে আর নিজেরা এইসব হাস্যকর কথা বার্তা বলে আমাদের কাছে সার্কাসের জোকারে পরিনত হচ্ছে।

অন্যদের পড়ার সুযোগ করুন...

                 

One thought on "কুরবানী প্রথাকে নিয়ে অজ্ঞেয়বাদীদের কিছু আবোল-তাবোল প্রশ্নের জবাব"

  1. good sir,may allah bess on you.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির অন্যান্য লিখা

ফেসবুকে যুক্ত হোন

Why I’m Asking For Donation?

© All rights reserved © 2025 Farabi Blog
Developed by ItNex BD